ভূমিকা : বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সূচনালগ্নে হাদীসশাস্ত্র ও মুহাদ্দিসদের সাথে পরিচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সুন্নাহর নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে আমি বলতে গেলে তেমন কিছুই জানতাম না। যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে কোনো বক্তব্য সম্পৃক্ত করা হতো তখন আমার কাছে বিষয়টি বেশ দুর্বোধ্য ঠেকত। তারপর আল্লাহ আমাকে তৌফিক দিলেন, আমি ইলমুল হাদীসের একটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকা পড়লাম। ভূমিকাটা পড়ার পেছনে আমি মোটামুটি লম্বা সময় দিলাম। সাথে আলেমদের লেকচার শুনলাম, তাদের প্রশ্নোত্তর পড়লাম। হাদীসশাস্ত্রের একটি প্রারম্ভিক তাখরীজের কাজ করার পর বুঝতে পারলাম যে, এর স্পষ্ট একটি কর্মপদ্ধতি আছে। এই শতাব্দীতে এসে সুন্নাহর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে যে তর্ক-বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো আমি পর্যবেক্ষণ করলাম।সহীহ বুখারী ও মুসলিমকে খুব গুরুত্ব দিয়ে পড়ার পর বুঝলাম যে, এই শাস্ত্রের ঘাড়ে আমার ঋণ আছে। ঋণটা হলো হাদীসশাস্ত্র যাচাইয়ের পদ্ধতির পক্ষে কিছু কথা লেখা। বিশেষ করে আমি যেহেতু এ ব্যাপারে প্রাচ্যবিদদের বইগুলো পড়েছি। হ্যাঁ, আমার আগে অনেক আলেম সুন্নাহর পক্ষে লড়েছেন। সুন্নাহর ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টিকারী লোকদের জবাবে অনেক চমৎকার বই তারা লিখেছেন। কিন্তু পাঠকদের কাছে আমি যে বই উপস্থাপন করতে যাচ্ছি সেটার বৈশিষ্ট্য হলো এটা দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাদীস শাস্ত্রকে একটা নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে। তারপর পশ্চিমা নানা গবেষণার সহায়তা নিয়ে প্রাচ্যবিদদের তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণের খণ্ডন করছে। প্রাচ্যবাদের জবাবে আমি যে সকল গবেষণার উপর নির্ভর করেছি, সেগুলো হয় পশ্চিমাদের লেখা, নতুবা প্রাচ্যের লেখক হলেও সুন্নাহর ব্যাপারে প্রাচ্যবিদদের মতো ধ্যান-ধারণা রাখে এমন লোকের লেখা। সংক্ষেপে বলতে গেলে এ বইটি হাদীসশাস্ত্রকে নিরপেক্ষ একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করছে। ইতিহাসশাস্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা প্রথম অধ্যায়ে তুলে ধরব পশ্চিমাদের চোখে ইতিহাসশাস্ত্রের ইতিহাস। এর মাধ্যমে আমরা আলোকায়নের যুগে ইতিহাসশাস্ত্রে সৃষ্ট দার্শনিক সমস্যাগুলো উদঘাটন করব। কেন এবং কীভাবে পশ্চিমারা তাদের ঐতিহ্যকে পরিত্যাগ করতে শুরু করল? কীভাবে তারা ক্রমান্বয়ে ‘জ্ঞানের’ মাপকাঠি নির্ণয় করল? ইতিহাসশাস্ত্র কি অন্যান্য ‘জ্ঞান’ থেকে মর্যাদার দিক থেকে নীচে? দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমরা উপস্থাপন করব ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো কালামবিদরা কীভাবে দেখেছে? তাদের আলোচনা থেকে আমরা আসলেই বেশ কিছু সংশয়মূলক বিষয় পেয়ে যাব। প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত হলে আমরা দেখতে পাব যে, হাদীসশাস্ত্রের প্রক্রিয়ার সামনে কিছু দার্শনিক সংশয় ও বাধা উপস্থিত। বইটির প্রথম বৈশিষ্ট্য এর তৃতীয় অধ্যায়ে নিহিত। আম জনতা যখন শুনতে পায় ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ এটা’ অথবা ‘বুখারী এটা বর্ণনা করেছেন’ তখন তারা সেগুলো বিশ্বাস করার পথে যে সকল দার্শনিক বাধা-বিপত্তি ও সংশয় আছে সেগুলোর খণ্ডন করছে তৃতীয় অধ্যায়। সুন্নাহর নির্ভরযোগ্যতা, বিশেষত সহীহ বুখারী ও মুসলিমের নির্ভরযোগ্যতা মেনে নেওয়ার বিষয়টি যে জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে সঠিক এবং এতে দার্শনিক কোনো সংকট নেই, তা প্রমাণ করা এখানে লক্ষ্য। সহীহ সনদ গ্রহণ করা জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে বৈধ বিষয়। এমনকি যদি হাদীসের মতনের নক্বদ তথা সমালোচনা নাও করা হয়। বইয়ের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় চতুর্থ অধ্যায়ে। এখানে প্রাচ্যবিদদের দৃষ্টিভঙ্গির জ্ঞানগত সমস্যাগুলোর সমালোচনা ও খণ্ডন করা হয়েছে। প্রাচ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ইমাম শাফেয়ীর আগে সুন্নাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করে। প্রথম শতাব্দীতে হাদীস লেখা হয়েছে এমন বিষয়টা নাকচ করে। সাধারণত দ্বিতীয় হিজরী শতকের শেষভাগ এবং তৃতীয় শতকে হাদীস যাচাই-বাছাই করার বিষয়টি স্বীকার করে। কিন্তু এর আগে হাদীসের ক্ষেত্রে শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয়ের প্রচেষ্টাকে নাকচ করে দেয়। আমরা এই অধ্যায়ে এমন কিছু পেশ করব যেটা নৃতাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করবে যে, প্রাচ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সেটা অবাস্তব নয়। অমুসলিম একজন গবেষকের জন্য জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে প্রাচ্যবিদদের ঐ সকল বক্তব্য গ্রহণ করা সম্ভব নয়। -রিদা যাইদান
Reviews
There are no reviews yet.