সেকুলারিজমের ইসলামিকরণ : ধর্মের সাথে এক দীর্ঘ ঐতিহাসিক যুদ্ধের পর সেকুলার সংস্কৃতি বর্তমান পশ্চিমা বিশ্বের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। পশ্চিমা সমাজের রাজনীতি ও আইন-কানুনের উপর সেকুলারিজমের প্রাধান্য একচ্ছত্র। এমনকি খ্রিস্টধর্মের উপরও সেকুলারিজমের নিয়ন্ত্রণ। বিজয়ী এ সংস্কৃতি কেবল ধর্মকে দূরে সরিয়েই ক্ষান্ত হয়নি,বরং মানুষকে ধর্মত্যাগে,ধর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং ধর্মের ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনেও ভূমিকা রেখেছে। ধর্মের উপর সেকুলারিজমের আক্রমণ এতই বেড়ে গিয়েছে যে,মানুষ ধারণা করতে শুরু করেছে,পশ্চিমা সমাজে ধর্মের অস্তিত্ব চলে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেকুলারিজমের এই উত্থানের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হবে ধর্ম বিলীন হয়ে যাওয়া। পশ্চিমে ধর্মের সাথে সেকুলারিজমের এ সংঘাত এখনও বন্ধ হয়নি। বরং সমগ্র বিশ্বে সম্ভাব্য সকল উপায়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলিমদের উপর এর বড় মাত্রার প্রভাব দেখা গিয়েছে। কিছু মানুষ মনে করে,পশ্চিমা বিশ্বে সেকুলারিজম যে ভূমিকা রেখেছে,মুসলিম বিশ্বেও একই ভূমিকা রাখবে। কিন্তু ইসলাম তো খ্রিস্টধর্ম নয়। মুসলিমদের হৃদয়ে দীনের অবস্থা পশ্চিমা সমাজের মতো নয়। ইউরোপের ইতিহাসে ধর্মের যে সংকট তার সাথে মুসলিমরা পরিচিত নয়। তাই মুসলিম বিশ্বে এসে সেকুলারিজম একটা সংকটে পড়ে গিয়েছে। এখানে সংকটটা মূলত ইসলামের সাথে সেকুলারিজমের দ্বন্দ্বের জায়গা থেকে। সেকুলারিজম এমন এক নমুনা যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। এ দুইয়ের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব নয়। একটা সেকুলার নীতির অধীনে ইসলাম ব্যক্তিগত বাছাইয়ের বিষয় হওয়া সম্ভব নয়। ইসলামে এটিঅকল্পনীয়। জীবনের ব্যবহারিক দিকগুলো থেকে ইসলামকে সরিয়ে দিয়ে মুসলিমরা দীন থেকে দূরে জীবনযাপন করবে এমনটা ভাবাও যায় না। মুসলিম সমাজ থেকে বিরোধ এবং প্রত্যাখ্যান বেশি পরিমাণে পাওয়ার পর সেকুলারিজমের এ সংকট আরো তীব্র হয়েছে। সেকুলাররা মুসলিম সমাজে এটি উপলব্ধি করেছে। এই সংকটে তারা কী ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে তাদের নানা রকম অবস্থান দেখা যায়। কোনো কোনো চিন্তাবিদ তো সেকুলারিজম পরিভাষা বাদ দিয়ে ভিন্ন পরিভাষা গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সবচেয়ে ফলপ্রসূ যে ভূমিকা সেকুলাররা নিয়েছে তা হলো সরাসরি ইসলামের বিধি-বিধান অস্বীকার করা থেকে দূরে থাকা। দীন ও সেকুলারিজম এবং ইসলাম ও মডার্নিজমের মাঝে সমন্বয়ের সর্বাত্মক চেষ্টা রাখা। শরয়ী টেক্সটের নতুন পাঠ আবিষ্কার করে সেকুলারিজম ও ইসলামের দ্বন্দ্ব ঘুচানোর প্রচেষ্টা চালানো। ফলে আধুনিক কিছু পরিভাষার মাধ্যমে ইসলামের সঙ্গে এর কোনো প্রকার সংঘাত নাকচ করে দেওয়া।
Reviews
There are no reviews yet.