সাইয়েদ সুলাইমান নদবি রহ. ‘তারিখে আরদুল কুরআন’ গ্রন্থটির রচনা শুরু করেন ‘সিরাতুন্নবি সা.’-এর ভূমিকা হিসেবে; এ-জন্য তাঁকে জাজিরাতুল আরবের ভূগোল, ইতিহাস, জাতিগোষ্ঠী, গোত্রসমূহ, ভাষাসমূহ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ধর্মাদর্শ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্যাবলি সংগ্রহ ও মৌলিক গবেষণায় ব্রতী হতে হয়। এতে তিনি নির্ভর করেন ইসলামি ও পাশ্চাত্য তথ্য-উৎস, ইতিহাস-গবেষণা ও প্রত্নতাত্ত্বিক তত্ত্বানুসন্ধানের ওপর। তাওরাত ও ইহুদিদের ধর্মীয় পুস্তকরাশির অনুবাদ প্রচণ্ড বৈপরীত্যপূর্ণ, গোলমেলে ও বিভ্রান্তিকর বলে তিনি মনে করেন। তাই তিনি হিব্রু ভাষা শেখেন, যাতে এ গ্রন্থরাজির মূলপাঠ অনুধাবন করতে পারেন। ইউরোপীয় গবেষকদের যুক্তি ও পর্যালোচনার ভ্রান্তিগুলো তিনি স্পষ্ট করে তুলে ধরেন। এভাবে তিনি এই অনন্য কীর্তি সাধন করেন যা নিরপেক্ষ জ্ঞানকাণ্ডের অবিনশ্বর দলিল হয়ে উঠেছে। . সাইয়েদ সুলাইমান নদবি রহ.-এর এই গ্রন্থ ভারতীয় উপমহাদেশের বিদ্যায়তনিক পরিমণ্ডলে অভূতপূর্ব গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। জ্ঞানচর্চায় এই গ্রন্থের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়। আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরি রহ. ‘আরদুল কুরআন’-এর প্রতি তাঁর মুগ্ধতা ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি এই গ্রন্থ থেকে তথ্য গ্রহণের পর বলেন, ‘আরদুল কুরআনের লেখক এই ক্ষেত্রে গবেষণার সমাপ্তি সাধন করেছেন।’ তাঁর রচনাবলিতে এই গ্রন্থকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। আল্লামা শাব্বির আহমাদ উসমানি পবিত্র কুরআনের ভাষ্য রচনায় ‘আরদুল কুরআন’ থেকে উপকৃত হন। . আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদবি রহ. বলেন, ‘আরদুল কুরআন একটি অনন্য ও অসাধারণ গ্রন্থ। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এই ধরনের গ্রন্থ রচিত হয়নি। আমাদের জ্ঞানভাণ্ডারে গ্রন্থটি অত্যন্ত মূল্যবান ঐশ্বর্য।’ . ওস্তাদ শামস তাবরিজ খান বলেন, ‘গবেষণায় ও নিরীক্ষণে সাইয়েদ নদবির মনোনীত পদ্ধতির সর্বোচ্চ শিখর হলো তারিখে আরদুল কুরআন।’ . আরবি ও ইংরেজি উৎস, ইসলামি, ইহুদি, রোমান ও গ্রিক গ্রন্থপঞ্জি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যাবলির ব্যবহারের পাশাপাশি পবিত্র কুরআনের আলোকে আরবের রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার বিবরণ ও বিশ্লেষণ এই গ্রন্থের প্রধান বৈশিষ্ট্য। . উর্দুভাষার প্রখ্যাত সাহিত্যিক মাহদি ইফাদি বলেন, ‘আমি বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে পড়েছি এই ভেবে যে ইউরোপের কোনো একটি একাডেমিতে আমার প্রত্নতত্ত্ববিদ বন্ধুদের দ্বারা ৬০ বছরেরও বেশি সময়ে যে-কাজটি সম্পন্ন হওয়া উচিত ছিলো তা আপনি কীভাবে সম্পন্ন করলেন?!’ সাইয়েদ সুলাইমান নদবি গ্রন্থটি রচনা করেন উর্দুভাষায়, তাঁর জীবদ্দশাতেই এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। বৈরুতের দারুল কলম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মুহাম্মাদ আলি দাওলা মুহাম্মাদ আকরাম নদবিকে গ্রন্থটির আরবি অনুবাদ করার অনুরোধ জানান। তিনি তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গ্রন্থটির আরবি অনুবাদ করেন। এখন গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হলো। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।
Reviews
There are no reviews yet.